আমরা অনেকেই ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম জানি না আজকে আপনাদেরকে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম ও পিল খেলে কি কি সমস্যা হয় তা সম্পূর্ণ তুলে ধরা হয়েছে আজকের এই আর্টিকেলে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অধিক ব্যবহিত পদ্ধতি হলো কন্ট্রাসেপটিভ পিল।
গর্ভ রোধের জন্য দুই ধরনের পিল ব্যবহার করা হয়ঃ
- রেগুলার কন্ট্রাসেপটিভ পিল – যেগুলো প্রতিদিন খেতে হয়।প্রতিমাসে ২৮ টি ট্যাবলেট।
- ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল।
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল
- ইমার্জেন্সি পিল কী?
- কারা ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নিতে পারবেন?
- ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কখন এবং কীভাবে নিতে হয়?
- ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের কি কি সাইড এফেক্ট হতে পারে?
- সর্বশেষে ইমার্জেন্সি পিল আপনাদের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর।
Emergency কন্ট্রাসেপটিভ পিল কিঃ সহজ ভাষায় বলতে গেলে যৌন মিলনের পরে গর্ভ রোধ বা প্রেগন্যান্সি প্রিভেন্ট করার জন্য যেই ঔষধ ব্যবহার করা হয় তাকেই ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল বলে।
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কীভাবে কাজ করেঃ প্রতিমাসে মেয়েদের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিশ্রিত হয়। এই সময় টাকে আমরা বলি অবুলেশন।
- আরও পড়ুনঃ কিভাবে বুজবেন আপনি গর্ভবতী কি না জানতে ক্লিক করুন।
- আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় জানতে ক্লিক করুন।
অবুলেশনের সময় যৌন মিলন করলে ছেলেদের শক্রানুর সাথে ডিম্বাণু মিলন হয়।
একে বলা হয় ফারটিলাইজেশন এবং তখন মেয়েদের জরায়ুতে এসে এটি বসে যায় এই প্রক্রিয়ার নাম ইমপ্লেনটেশন এভাবে বাচ্চা হয়।
পিল তিন ভাবে প্রেগন্যান্সি প্রিভেন্ট করে
- ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল মেয়েদের অবুলেশন বন্ধ করে দেয় বা অবুলেশন ডিলে করে দেয় ফলে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন হয় না।
- ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল জরায়ুর সার্ভিকাল মিউক্যাসকে ঘন করে দেয় ফলে শুক্রাণু উপরের দিকে যেতে পারে না।
- যদি এমন হয় অলরেডি অবুলেশন হয়ে গেছে তখন ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল ফারটিলাইজেশন এবং ইমপ্লেনটেশন হতে দেয় না।
এভাবে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল গর্ভ রোধ করে। তবে যদি ইমপ্লেনটেশন হয়ে যায় মানে প্রেগন্যান্সি হয়ে যায়।
তখন কিন্তু এটি কাজ করে না অর্থাৎ টেস্ট পজেটিভ হওয়ার পরে এটি বাচ্চা নষ্ট করে না তাই পেটে বাচ্চা আসলে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য এটি কখনই খাবেন না।
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কারা নিতে পারবেনঃ
দেখুন এর নামই কন্ট্রাসেপটিভ পিল তো এটি আপনি শুধু মাত্র ইমার্জেন্সি পারপাস নিতে পারবেন। যেমনঃ
- আনওয়ান্টেড সেক্স অর্থাৎ আপনি কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিচ্ছেন না এর মধ্যে যৌন মিলন হয়ে গেছে কিন্তু বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন না এক্ষেত্রে আপনি ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নিতে পারেন।
- যৌন মিলনের সময় যদি কনডম ছিঁড়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তখন আপনি ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নিতে পারেন।
- কোনো কারণে আপনার রেগুলার কন্ট্রাসেপটিভ পিল দুই বা তার বেশি মিস হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আপনি ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নিতে পারেন।
- যদি অন্য কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি না নিয়ে থাকেন তাহলেই ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নেয়া যায়।
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কখন এবং কীভাবে নিতে হয়ঃ
- ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল যৌন মিলনের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেওয়া উত্তম।
- সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টার মধ্যে নিতে হয়। ৭২ ঘন্টার পরে এটি কাজ করে না। ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের সাকসেস রেট ৮০-৯০%।
- তবে এর হার কম বা বেশি হতে পারে এটি নিরবর করে ঔষধ যৌন মিলনের কত ঘন্টা পর নিয়েছেন তার ওপরে।
- মিলনের পর যত তাড়াতাড়ি নিবেন তারা সাকসেস রেট তত বেশি।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
বাজারে অনেক রকম ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল পাওয়া যায়। এর মধ্যে বহু ব্যবহিত এবং নিরাপদ হচ্ছে লেভোনরজেস্টিরল ১.৫ মিলি গ্রাম।
বাজারে ই – পিল, আই – পিল, নরপিল, নরিক্স, ইমকন, আনওয়ান্টেড – ৭২ নামে পাবেন।
এগুলো যৌন মিলনের যত পর দ্রুত সম্ভব অবশ্যই ৭২ ঘন্টার মধ্যে একটি ট্যাবলেট খেলেই হবে।
এটি খাওয়ার পর যদি দুই ঘন্টার মধ্যে বমি হয়ে যায় তাহলে পুনরায় আরেকটি ট্যাবলেট খেতে হবে। দুই ঘন্টার পরে বমি হলে আর খেতে হবে না।
তাই সবচেয়ে ভালো হচ্ছে এটি খাওয়ার এক ঘন্টা আগে একটি বমির ঔষধ খেয়ে নিয়ে তারপর আরেকটি খেলে।
খাওয়ার আগে লেভোনরজেস্টিরল ১.৫ মিলি গ্রাম কিনা দেখে নিন।
যদি লেভোনরজেস্টিরল ০.৭৫ মিলি গ্রাম হয় তাহলে দুইটি ট্যাবলেট একসাথে অথবা একটি ট্যাবলেট খাওয়ার ১২ ঘন্টা পর আরেকটি ট্যাবলেট খেতে হবে।
ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের সাইড এফেক্ট
স্বাভাবিক ভাবে প্রথম বার ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করলে তেমন কোনো সাইড এফেক্ট দেখা দেয় না।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমিরভাব বা বমি হতে পারে।
মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, স্তনে ব্যথা হতে পারে এগুলো মাইনর সাইড এফেক্ট।
এটি নেয়ার সাত দিন পর্যন্ত এর একশন শরীরে থাকে। সাত দিন পরে শরীরে কোনো একশন থাকে না।
তবে কখনো কখনো ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নেওয়ার পরে পিরিয়ডের মধ্য বরতি সময়ে হাল্কা ব্লিডিং হতে পারে।
এমনকি পরবর্তী এক দুই মাস পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। পিরিয়ড কিছু দিন আগে বা পরেও হতে পারে। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই।
তবে যদি এটি নেওয়ার পর পাচ দিনের বেশি পিরিয়ড মিস হয় বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় বা তল পেটে অতিরিক্ত ব্যথা হয় তাহলে দ্রুত একজন গাইনিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ইমার্জেন্সি পিল নিয়ে কিছু উত্তর
ইমার্জেন্সি পিল নেওয়া যাবে না
১ঃ যদি আপনি গর্ভবতী হন বা মনে হয় গর্ভধারণ হয়েছে তখন বাচ্চা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এটি নেওয়া যাবে না এতে কাজ হবে না।
২ঃ পূর্বে কখনো ইকটপিক প্রেগন্যান্সি হয়ে থাকলে তাহলে প্লিজ ইমার্জেন্সি পিল নিবেন না এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়?
উত্তরঃ সাধারণত সময় মত পিরিয়ড হয়ে যায় এবং অনেক সময় কিছু দিন আগে পরে হয়ে যেতে পারে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।
২ঃ ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল খাওয়ার পরেও কি বাচ্চা হতে পারে?
উত্তরঃ যদি যৌন মিলনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে খান তাহলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ০-১%।
৩ঃ ইমার্জেন্সি পিল কি বার বার নেওয়া যাবে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে দুই তিন বার কি নেওয়া যাবে?
উত্তরঃ এটি ইমার্জেন্সি পিল এতে হরমোনের মাত্রা অনেক বেশি। যদি আপনার বার বার প্রয়োজন হয় তাহলে রেগুলার পিল নেওয়াই উত্তম।
নিয়মিত নেওয়া যাবে না এমন করা যাবে না যে আমি অন্য কোনো পদ্ধতি নেবো না মাঝে মাঝে একটি নেবো কারণ এর কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে যেগুলো ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি।
৪ঃ একবার নেওয়ার পর কি পরবর্তীতে বাচ্চা নেওয়ার সমস্যা হতে পারে?
উত্তরঃ না পরবর্তীতে বাচ্চা নিতে সমস্যা নেই। তবে এটি বার বার নিলে সমস্যা হতে পারে। পিরিয়ড অনিয়মিত করতে পারে। তখন সমস্যা হতে পারে।
৫ঃ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায় এমন মায়েরা কী নিতে পারবেন?
উত্তরঃ অবশ্যই নিতে পারবে। তবে ইমার্জেন্সি পারপাস। এতে বাচ্চার বা মায়ের কোনো সমস্যা হবে না।
আর্টিকেল লিখেছেন জান্নাতুল ফেরদাউস কলি❞